শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া খালের ওপর সাতধারা নামক স্থানের লোহার সেতুটি সংস্কারের অভাবে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
ভেঙে গেছে কংক্রিটের স্লাব, মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে লোহার পাত, যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। তবুও গত ১৮ বছরে হয়নি কোনো সংস্কার।
আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া খালের ওপর সাতধারা নামক স্থানের লোহার সেতুটি সংস্কারের অভাবে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ সেতুটি পারপার হচ্ছে। দ্রুত সেতুুটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর(এলজিইডি) আমতলী উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে আমতলী সদর ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউপির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উপজেলা শহরে যোগাযোগের জন্য আড়পাঙ্গাশিয়া খালের ওপর সাতধারা নামক স্থানে এই লোহার সেতুটি নির্মাণ করেন আমতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। তৎকালীন সময় সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৪৬ লাখ টাকা। নির্মাণের পর দীর্ঘ ১৮ বছর অতিবাহিত হলেও সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নড়বড়ে লোহার বিমের ওপর দাড়িয়ে আছে ১০ গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র সেতুটি। স্লাব খুলে খালে পড়ে আছে। স্লাব না থাকায় সেতুর অনেক স্থান ফাঁকা। আড়াআড়িভাবে স্লাব দিয়ে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সংস্কারের অভাবে মানুষ চলাচলে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ওই সেতু দিয়ে আমতলী সদর ইউপির দক্ষিণ আমতলী সাতধারা ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউপির পাতাকাটা, পূর্ব আড়পাঙ্গাশিয়া ও হুমা গ্রামসহ অন্তত ১০টি গ্রামের ১০ হাজার মানুষ এবং দক্ষিণ আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। সেতুটির সিমেন্টের স্লাব গুলো ধসে খালে পরে যাওয়ায় অনেক জায়গা ফাঁকা হয়ে গেছে।
স্লাবের সিমেন্টের ঢালাই ধসে পড়ায় রড বেড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ফাঁকা স্থানে আড়াআড়িভাবে স্লাব দিয়ে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে পার হচ্ছে। সেতুর দু’পাশের লোহার রেলিং এ মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। নড়বড়ে সেতুতে মানুষ উঠলেই দোলে। এ অবস্থায় সেতু ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় সাতধারা গ্রামের বাসিন্দা মিনারা বেগম। নিয়মিত এই সেতু দিয়ে চলাচল করেন। সেতু পার হতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাকে। তবুও জীবন ও জীবিকার তাগিদে উপজেলা শহরে আসতে হলে এই সেতু পার হয়েই আসতে হয় তাকে। তিনি বলেন, ‘সেতুটি দিয়্যা পার অইতে ডর হরে। তবুও কিছু হরার নাই। কাম কইরা খাইতে হইলে এই সেতু পার হইয়াই মোগো গঞ্জে যাইতে হইবে।’
একই এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, সেতুটির অবস্থা খুব খারাপ। স্লাব ধসে পরে অনেক জায়গায় ফাঁকা হয়ে গেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হতে হয়। গত ১৮ বছর আগে সেতু নির্মাণ করা হলেও তারপর আর কোনো সংস্কার হয়নি। বরগুনার আমতলী উপজেলার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইউপির কমপক্ষে ১০টি গ্রামের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম সেতুটি সংস্কার না হলে যে কোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোসা. সোহেলী পারভীন মালা বলেন, নড়বড়ে সেতু দিয়ে মানুষের চলাচলে খুবই কষ্ট হয়। ওই স্থানে দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণ করা জরুরি। এ বিষয়ে আমরা উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় কথা বলবো।
আমতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, দক্ষিণ আমতলী ও সাতধারা নামক স্থানের আড়পাঙ্গাশিয়া খালের ওপর দুই ইউপির সংযোগ সেতুটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। এই দুই ইউপির মানুষের এখন প্রাণের দাবি এই সেতুটি সংস্কার করা। আমরা বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়ায় শিগগিরই এই সেতুটি পুনর্নির্মাণ করবে।
এবিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর আমতলী কার্যালয়ের প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আড়পাঙ্গাশিয়া খালের সাতধারা নামক স্থানে গার্ডার সেতু নির্মাণের প্রকল্প দেয়া হয়েছে। প্রকল্প পাশ হলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করছি প্রকল্প পাশ হলে আমতলী উপজেলার এই দুটি ইউপির মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে।
Leave a Reply